বুধবার, জুলাই ১০, ২০২৪




অতিথিদের জিম্মি করে অর্থ আদায়ের অভিযোগ নাঃগঞ্জের নিঝুম পল্লী রিসোর্টের বিরুদ্ধে

বিশেষ প্রতিনিধিঃ নারায়নগঞ্জের রূপগঞ্জ এলাকায় অবস্থিত পূর্বাচল নিঝুম পল্লী রিসোর্টের নামে সম্প্রতি ৮০০০ টাকার একটি ফ্যামিলি প্যাকেজ রুম দেখিয়ে ২ দিনে ৩২০০০ টাকা হাতিয়ে নেওয়াসহ মানহানি ও হেনস্তার অভিযোগ উঠেছে। জানা যায়, গত ২৬ জুন বিকেলে নিঝুম পল্লী রিসোর্টের একজন কর্মকর্তার সাথে বুকিং সংক্রান্ত বিষয়ে যোগাযোগ করেন ঢাকায় বসবাসকারী আফতাব চৈৗধুরী। ভুক্তভোগী আফতাব চৈৗধুরী দেশের স্বনামধন্য গণমাধ্যমে স্টাফ করেসপন্ডেন্ট হিসেবে কর্মরত আছেন।

রিসোর্টের নানা প্যাকেজ ও ফ্যামিলি প্যাকেজ নিয়ে আলোচনা হয় কর্তৃপক্ষের সাথে। প্যাকেজের অন্তর্ভুক্ত সুযোগ-সুবিধা, খাবার তালিকা, সুইমিং পুল ও প্যাকেজ মূল্যসহ রিসোর্টের চেক-ইন/চেক-আউটের সময়সীমা নিয়েও আলোচনা হয়।

একই দিন সন্ধ্যায় বিকাশের মাধ্যমে অগ্রিম ২০০০ টাকা দিয়ে বুকিং করেন আফতাব চৈৗধুরী। পরিবার নিয়ে ওইদিনই রাত প্রায় সারে ১১ টার দিকে রিসোর্টে চেক-ইন করেন। দুইদিন সেখানে অবস্থান করে ২৮ জুন দুপুর ১২টা বাজার আগেই চেক-আউট করেন তারা।

চেকআউটের সময় দু’দিনের সব খরচ মিলিয়ে মোট ৩২০০০ টাকার দাবি করেন রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ। দু’দিনের এতো টাকা বিল কীভাবে আসলো জানতে চাইলে, রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ জানান রুম প্রতি ৮০০০ টাকা করে ২ রুমে ২ দিনের জন্য ৩২০০ টাকা বিল হয়েছে।

সে সময় আফতাব ও তার পরিবার রিসোর্ট কর্তৃপক্ষকে জানায় যে, আমরা আপনাদের একজন কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করে অ্যাডভান্স দিয়ে বুকিং করেই এসেছি আর সে আমাদের যে প্যাকেজ দেখিয়েছেন সেখানে পুরো প্যাকেজ ৮০০০ টাকা মেনশন করা ছিল এবং ছবি ও ভিডিওতেও জয়েন্ট রুম দেখানো হয়েছে।

শুধু তাই না, আমরা ৫ জন দরকাল হলে এক রুমে ফ্লোরিং করে থাকতে পারবো সব মিলিয়ে কত পরবে বিস্তারিত জানতে চাইলে তিনি আমাদের আসস্ত করে জানানিয়েছে এটা জয়েন রুম আমরা ৫ জনই থাকতে পারবো। প্রাইজ নিয়ে বারবার তাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি ৮০০০ টাকাই বলেছেন আর দুইদিনের জন্য ১৬০০০ টাকায় আমাদের সাথে ডিল হয়েছে।

তাহলে এখন ৩২০০০ টাকা কীভাবে হয় আর আমরা তো সময়মতো চেক-আউট করেছি। তাছাড়া আমরা পুরো দু’দিনও থাকি নাই একদিনের ১২ ঘণ্টা আরেকদিন পুরোটা ২৪ ঘণ্টা।

অভিযোগ করে কর্তৃপক্ষকে বলেন, আপনাদের প্যাকেজে খাবার মেনুতে যা ছিলো তা সব খাবার আমরা পাইনি, রাতে বারবিকিউ ছিল সেটাও আপনারা দেন নাই, যে সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার কথা তাও ঠিক মতো পাইনি, সুইমিং পুলও ব্যবহার করিনি আর দুই রুম বলছেন তাহলে আরেক রুমের ওয়াশরুম কোথায়? এক রুমের গেস্ট অন্য আরেক গেস্টের রুমে গিয়ে ওয়াশরুম ব্যবহার করবে? এটা কেমন প্রাইভেসি? এসব কিছু বিবেচনা করে কিছু কম-বেশ কনসিডার করে ধরলেও এতো টাকা বিল কীভাবে হয়!

আর এখানে আসার পরেও আপনাদের কাছে বিলের রিসিট চেয়েছি আপনারা রিসিট দেন নাই। বলেছেন যেদিন চেকআউট করবো সেদিন সব ক্লিয়ার করে রিসিট দিয়ে দিবেন। আগে দিলে হয়তো আমরা দু’দিন থাকতাম না।

আর প্যাকেজে জয়েন্ট রুম দেখিয়ে দুই রুমের বিল কীভাবে দাবি করছেন? এসব প্রশ্নের জবাবে রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ ”আপনাদের কোথাও ভুল হয়েছে” বলে গেস্টদের উপর দায় চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন।

পরবর্তীতে তারা প্যাকেজের প্রাইজ বেড়েছে, আপডেট করা হয়নি, এখানে সিঙ্গেল রুম হিসেবে কাউন্ট হয়ে আপনাদের দুই রুমের প্রাইজই দিতে হব। ভুক্তভোগী গেস্টদের লাম-ছাম ভাবে বুঝিয়ে নিজেদের দোষ ঢাকার চেষ্টা করতে থাকেন।

তাতে ভুক্তভোগী আফতাব ও তার পরিবার সন্তুষ্ট না হলে এক পর্যায় রিসোর্টে কর্মরত কয়েকজন স্টাফ চরাও হয়ে ভুক্তভোগী ও পরিবারকে হেনস্তা শুরু করেন। ভুক্তভোগী আফতাব তার পেশাগত সাংবাদিকতার পরিচয় দিলে তাতে আরোও চরাও হয়ে হয়রানি ও মানহানি মূলক কথা বলে তাদের কাছ থেকে জোরপূর্বক ৩২০০০ টাকা আদায় করে নেন।

এ বিষয় রিসোর্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে তাদের কল করা হলে, সাংবাদিক পরিচয় শুনে প্রথমে ফোন রেখে দেন। কয়েকবার চেষ্টায় একজন ফোন ধরলেও এ বিষয়ে কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি।

পরে উর্দ্ধতন কর্মকর্তা কিংবা মালিক পক্ষের কারো সাথে কথা বলতে চাইলে রিসোর্টের সিকিউরিটি গার্ড পরিচয়ে একজনকে ফোনে ধরিয়ে দেওয়া হয়। শুরুতে সিকিউরিটি গার্ড পরিচয়ে দিলেও পরে তিনি নিজেকে মালিক বলে দাবি করেন এবং ঘটনার বিস্তারিত কোনো উত্তর না দিয়ে “কি করবেন করেন গিয়ে” বলে গালাগাল ও হুমকি দিয়ে ফোন রেখে দেন। এরপর একাধিকবার চেষ্টা করলে ফোন বন্ধ করে রেখে দেন রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ।

আফতাব চৈৗধুরী জানায়, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসে হেনস্তার শিকার হতে হয়েছে। এখানে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি চলে যা আমরা প্যাকেজে দেখে এসেছি এখানে ঠিকঠাক তা পাইনি উল্টো প্যাকেজের ডাবল টাকা বাধ্য হয়ে পরিশোধ করতে হয়েছে। রিসোর্টের নামে প্রতারণার বিষয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনে অভিযোগ করার কথা জানান।

প্রয়োজনে হেনস্তার ঘটনায় পূর্বাচল নিঝুম পল্লি রিসোর্টের নামে আইনি ব্যবস্থা নিবো বলেন জানান ভুক্তভোগি। জানা যায়, পূর্বাচল নিঝুম পল্লী রিসোর্টে দীর্ঘদিন ধরেই এমন অনিয়ম ও হেনস্তার শিকার হয়েছেন রিসোর্টে আগত বেশ কিছু ভুক্তভোগী। তাছাড়া খাবারের তালিকা ও মান নিয়েও আছে নানা অভিযোগ। প্যাকেজে যেসব খাবারের তালিকায় উল্লেখ করা হয় বাস্ততবে তার চিত্র ভিন্ন।

রিসোর্টে বুকিং দিয়ে আসা গেস্টদের প্যাকেজ অনুযায়ী যে সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার কথা তার প্রায় বেশিরভাগটাই ঠিক ঠাক না পাওয়ার অভিযোগ আছে অহরহ।

রিসোর্টে আসা প্রায় সব গেস্টদেরই জরুরি প্রয়োজনে বাহিরে যাওয়ায় আছে নিষেধাজ্ঞা! গেইট পাস ছাড়া কাউকে ঢুকতে ও বের হতে দেওয়া হয়না। রিসিপশনেও নিয়মিত থাকেন না কর্মরত কোনো কর্মকর্তা। অভিযোগ জানালেও নেওয়া হয়না কোনো ব্যবস্থা উল্টো দেয়া হয় হুমকি।

চটকদার এসব প্যাকেজে সুস্বাদু খাবার, সুইমিংপুল, সুপার কুল/ডিলাক্স/জয়েন্ট/কাপল রুমসহ নানা সুযোগ-সুবিধা ও বিভিন্ন ভুয়া সিজনাল অফারের ফাঁদে ফেলে পরবর্তীতে এসব কর্মরত কিছু স্টাফরাই এভাবে অনেক ভুক্তভোগীদের জিম্মির করে হেনস্তা করার পর আদায় করছেন দ্বিগুণেরও বেশি টাকা।

এসব বিষয়ে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন , নারায়ণগঞ্জ জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সেলিমুজ্জামান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

3 + fourteen =

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর