নারায়ণগঞ্জ প্রতিদিনঃ
ঈদ মোবারক! ঈদ মোবারক! ঈদ মোবারক!
تَقَبَّلَ اللهُ مِنَّا وَمِنْكُمْ صَالِحَ الأَعْمَالِ
(তাক্বাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম সালিহাল আ’মাল।)
অর্থ: ‘আল্লাহ তায়ালা আমাদের ও আপনাদের ভাল কাজগুলো কবুল করুন।’ (আমিন)
আজ মুসলিম উম্মাহর বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আযহা। এ বছর বৈশ্বিক করোনা মহামারির মধ্যে ভিন্ন মাত্রা ও আবহে এই ঈদ এসেছে।
ঈদুল আযহা বা ইয়াওমুন নাহ্র। আমাদের দেশের ভাষায় কুরবানী ঈদ। ঈদুল আযহার দিনের প্রধান আমল-কুরবানী। কুরবানী শা‘আইরে ইসলাম তথা ইসলামী নিদর্শনাবলীর অন্যতম। এ শরীয়তে কুরবানীর যে পন্থা ও পদ্ধতি নির্দেশিত হয়েছে তার মূলসূত্র ‘মিল্লাতে ইব্রাহীমী’তে বিদ্যমান ছিল। কুরআন মাজীদ ও সহীহ হাদীস থেকে তা স্পষ্ট জানা যায়। এজন্য কুরবানীকে ‘সুন্নাতে ইবরাহীম’ নামে অভিহিত করা হয়। মুসলিম জাতির পিতা হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর আত্মত্যাগ ও আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের অনুপম দৃষ্টান্ত ও আদর্শের প্রতীক হিসেবে মুসলিম উম্মাহ এই ঈদুল আযহা বা কোরবানীর ঈদ পালন করে থাকেন।
ঈদ আল্লাহর পক্ষ হতে নির্দেশিত। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- أُمِرْتُ بِيَوْمِ الْأَضْحَى، جَعَلَهُ اللهُ عِيدًا لِهَذِهِ الْأُمّةِ. “আমাকে ‘ইয়াওমুল আযহা’র আদেশ করা হয়েছে (অর্থাৎ, এ দিবসে কুরবানী করার আদেশ করা হয়েছে); এ দিবসকে আল্লাহ তাআলা এই উম্মতের জন্য ঈদ বানিয়েছেন।” -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৬৫৭৫; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ৫৯১৪; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ২৭৮৯; সুনানে নাসায়ী, হাদীস ৪৩৬৫
পবিত্র হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী, প্রতি বছর জিলহজ মাসের ১০ তারিখে বিশ্বের সকল মুসলিম খোলা ময়দানে ঈদের জামাত আদায়ের পর যার যা সাধ্য ও পছন্দ অনুযায়ী পশু কোরবানি দিয়ে থাকেন। আরবি আজহা এবং কোরবান উভয় শব্দের অর্থ হচ্ছে উৎসর্গ। কোরবানি শব্দের উত্পত্তিগত অর্থ হচ্ছে আত্মত্যাগ, আত্মোৎসর্গ, নিজেকে বিসর্জন, নৈকট্য লাভের চেষ্টা, অতিশয় নিকটবর্তী হওয়া প্রভৃতি।
প্রত্যেক আর্থিক সামর্থ্যবান মুসলমানের ওপর কোরবানি করা ওয়াজিব। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকার পরও কোরবানি দিল না, সে যেন আমার ঈদগাহে না আসে” (মুসনাদে আহমদ)।
*আল কোরআনের সুরা কাউসারে বলা হয়েছে- “অতএব, তোমার পালনকর্তার উদ্দেশে নামাজ পড়ো এবং কোরবানি করো।” *সুরা হাজ্জে বলা হয়েছে- “কোরবানির পশুকে তোমাদের জন্য আল্লাহর অন্যতম নিদর্শন করেছি। এর মধ্যে তোমাদের জন্য কল্যাণ আছে।” *সুরা হাজ্জের আরেক আয়াতে বলা হয়েছে, “এগুলোর (কোরবানির পশুর) গোশত ও রক্ত (কিছুই) আল্লাহর কাছে পৌঁছাবে না, বরং তাঁর কাছে পৌঁছাবে তোমাদের তাকওয়া।” আল্লাহর বান্দারা তার প্রতি কে কতটুকু ত্যাগ ও খোদাভীতির পরিচয় দিতে প্রস্তুত এবং তারা কতখানি আল্লাহপাকের নির্দেশ পালন করেন আল্লাহ কেবলমাত্র তা–ই প্রত্যক্ষ করেন।
জিলহজ মাসের ১০, ১১ ও ১২ তারিখের যে কোনো এক দিন কোরবানি করা যায়। কোরবানিকৃত পশুর তিন ভাগের এক ভাগ গরিব–মিসকিন, এক ভাগ আত্মীয়স্বজনের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়ার বিধান আছে। আবার পুরোটাই বিলিয়ে দেওয়া যায়। এদিকে ৯ জিলহজ ফজরের নামাজের পর থেকে ১৩ জিলহজ আসর পর্যন্ত প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর তাকবিরে তালবিয়াহ (আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ, ওয়াল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদ্) পাঠ করা ওয়াজিব।
আজ ২১ জুলাই বুধবার থেকে ঈদুল আযহা উপলক্ষে তিন দিনের সরকারি ছুটি শুরু হয়েছে।
দেশবাসীকে পবিত্র ঈদুল আযহার শুভেচ্ছাবাণী জানিয়েছেনঃ রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় পার্টি–জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এমপি। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা এ উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
Leave a Reply