শুক্রবার, জানুয়ারি ১, ২০১৬




জোড়-বিজোড় গাড়ি চলাচল প্রথম দিনে সফল

car

দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল গর্বিত বোধ করতেই পারেন। কেননা, রাজধানীর দূষণ কমাতে তাঁর সরকারের জোড়-বিজোড় পরীক্ষা প্রথম দিনে দুর্দান্ত সফল। দিল্লির মাত্রা ছাড়া দূষণ কমাতে বিধিনিষেধ মানতে সবার মধ্যে একটা তাগিদ দেখা গেছে।

নতুন বছরের প্রথম দিনে আজ শুক্রবার শুধু বিজোড় সংখ্যার গাড়িই রাস্তায় নেমেছে। জোড় সংখ্যার কিছু গাড়ি যে চোখে পড়েনি তা নয়, তবে সংখ্যায় তা অল্প। বিধি ভাঙার জন্য বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত পুলিশ দুই হাজার টাকা জরিমানার মোট ১১৭টি চালানও কেটেছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও বলা যায়, নতুন এই পরীক্ষায় দিল্লি চমৎকার উতরে গেছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমি গর্বিত। জোড়-বিজোড় পরীক্ষায় দিল্লিবাসীর সাড়ায় আমি অভিভূত। এটা এখন এক আন্দোলনের পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। দিল্লি গোটা দেশকে পথ দেখাবে।’
জোড়-বিজোড় পরীক্ষা হলো যে ব্যক্তিগত গাড়ির নম্বর প্লেটের শেষ সংখ্যা বিজোড়, সেই গাড়ি মাসের এক, তিন, পাঁচ, সাতের মতো বিজোড় তারিখে শুধু রাস্তায় নামতে পারবে। জোড় নম্বর প্লেটের গাড়িগুলি বের হবে দুই, চার, ছয়, আটের মতো জোড় তারিখে। শূন্যকে জোড় সংখ্যা হিসেবে ধরা হয়েছে। রোববার এই নিয়ম শিথিল। এই বিধি ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত পরীক্ষামূলকভাবে কার্যকর থাকবে। তারপর নিয়মের সুবিধে-অসুবিধে খতিয়ে দেখে পূর্ণাঙ্গ নীতি তৈরি হবে। সরকারের হিসেব অনুযায়ী এই নীতির ফলে ফি দিন শুধু দিল্লিতেই অন্তত কুড়ি লাখ ব্যক্তিগত গাড়ি রাস্তায় কম চলবে।
বছরের প্রথম দিন হওয়ায় শুক্রবার রাজধানীতে ছিল ছুটির মেজাজ। আবহাওয়াও ছিল ঝকঝকে। ছুটি উপভোগ করতে যারা ঘর ছেড়ে বেরিয়েছে তাদের বিশেষ একটা অসুবিধায় পড়তে হয়নি। কারণ, নিয়ম সফল করতে সরকার চেষ্টার কোনো ত্রুটি রাখেনি। ৩ হাজারের মতো বেশি সরকারি বাস রাস্তায় নামানো হয়। মেট্রো সারা দিনে ৭০ টির মতো ট্রিপ বাড়তি চালায়। ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত রাজধানীর সব স্কুলে ছুটি ঘোষণা করায় স্কুলের বাসগুলো যাত্রী বহনের কাজে নামানো হয়েছে। নিয়মের আওতা থেকে সিএনজিচালিত সব গাড়িকে ছাড় দেওয়া হয়। ছাড়ের মধ্যে ছিল ট্যাক্সি ও অটো রিকশাও। স্কুটার, মোটরসাইকেল এবং নারী গাড়িচালকদের এই নিয়মের বাইরে রাখা হয়েছে। নিয়ম ভেঙে যাঁরা বেরিয়েছেন, তাঁদের অনেকেই পুলিশের হাতে ধরা পড়ে দুই হাজার টাকা জরিমানা দিয়েছেন। তাঁদের কেউ কেউ বলেছেন, গাড়ি বের না করে তাঁদের উপায় ছিল না। ধৃতদের মধ্যে বিজেপির এক সাংসদও আছেন। যদিও বিজেপি এই বিধি-নিয়মের বিরোধিতা করেনি।
নিয়ম সফল করতে দিল্লির আম আদমি পার্টির মন্ত্রী-নেতারা নিজেদের কিন্তু ছাড় দেননি। মুখ্যমন্ত্রী অন্য দুই মন্ত্রীর সঙ্গে এক গাড়িতে অফিস আসেন। পর্যটনমন্ত্রী নিজে মোটর বাইক চালিয়ে আসেন, পরিবেশমন্ত্রী আসেন অটো চেপে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও কার পুল-এর ব্যবস্থা করে। বেসরকারি অনেক অফিস পরিস্থিতির মোকাবিলায় অফিসে আসা-যাওয়ার সময় শিথিল করেছে। তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে অনেকেই আবার বাড়ি থেকে কাজের ব্যবস্থা চালু করেছে। সব মিলিয়ে একটা বিষয় স্পষ্ট, দিল্লির মাত্রা ছাড়া দূষণ কমাতে এই বিধিনিষেধ মানতে সব মহলেই একটা তাগিদ দেখা গেছে। সবাই এটুকু বুঝেছে, সমস্যা অতি প্রকট, সমাধানের জন্য চূড়ান্ত ধরনের কিছু একটা করা খুবই জরুরি।
দূষণ রোধে কেজরিওয়ালের এই দাওয়াই ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ও গ্রিন ট্রাইব্যুনাল সমর্থন তো করেইছে, মার্কিন দূতাবাসও এই উদ্যোগে শামিল হয়েছে। সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে এই বিষয়ে একটা বিপুল সাড়া পড়েছে। আম আদমি পার্টির নেতা, কর্মী, মন্ত্রী এবং সমর্থকেরা বিভিন্ন স্কুলে গিয়ে ছাত্রছাত্রীদের দূষণ বিষয়ে সচেতন করেছেন। বিজ্ঞাপনও তৈরি করা হয়েছে, যাতে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের বলা হচ্ছে বাবা, মা অথবা আত্মীয়দের বোঝাতে, তাঁরা যেন নিয়মের অন্যথা না করেন। বহু সাধারণ মানুষ শুক্রবার নিজেদের উদ্যোগে স্বেচ্ছাসেবীর ভূমিকা পালন করেছেন। বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে মোড়ে তাঁরা হাতে ফুল নিয়ে দাঁড়িয়ে থেকেছেন। নিয়ম-ভাঙা চালকের হাতে ফুল ধরিয়ে হাসিমুখে তাঁরা বলেছেন, প্লিজ, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা ভেবে আপনারা নিয়ম মানুন। দিল্লির পুলিশ কমিশনার বি এস বাসসিও আবেদন করেছেন, জনগণ যেন তাঁদের সহযোগিতা করেন।
আগামীকাল শনি ও পরশু রোববার ছুটির দিন। সোমবার থেকে শুরু হবে নিয়মিত অফিস। সেই দিন থেকেই বোঝা যাবে এই বিধি-নিয়ম সত্যিই কতটা কার্যকর হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

8 + 10 =

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর